পাঠ-প্রতিক্রিয়া : ঝিলাম নদীর দেশ
লিখেছেন লিখেছেন আওণ রাহ'বার ২০ মার্চ, ২০১৬, ১২:৩১:৪৫ দুপুর
বইয়ের নাম: ঝিলাম নদীর দেশ।
লেখক: বুলবুল সরওয়ার।
প্রকাশনা: বাড কম্প্রিন্ট এন্ড পাবলিকেশন্স।
মুদ্রিত মূল্য: ৮০ টাকা।
- - -
বই উপহার পেতে কার না ভালো লাগে!
উপহার হিসেবে বই পেলে, আমার তো মনে হয়, বই না যেন আকাশের চাঁদ হাতের মুঠোয় পেলাম। ভাবতেই এক অভূতপূর্ব শিহরণ জাগে 'দুই হাতে চাঁদ'!! যখন বইটি পড়ি তখন উপহারদাতার নাম মনের মাঝে বারবার ভাসতে থাকে। অঙ্কিত হয়ে রয় উপহারদাতার নাম বইটির ভাজে- ভাজে। ঝিলাম নদীর দেশ বইটি এক সুহৃদ ভাইয়ার কাছ থেকে উপহার পেয়ে এমন ডুব দিলাম যে, এক নিমেষেই নদী পার হয়ে গেলাম। সাঁতার যে কাটছি সে হুঁশটুকুও ছিলনা। বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছে।
ঝিলাম নদী: ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পাঞ্জাবের পাঁচটি বড় নদীগুলোর মধ্যে ঝিলাম নদী একটি। এটি চেনব নদীর একটি উপনদী এবং এর দৈর্ঘ্য ৮১৩ কিলোমিটার (৫০৫ মাইল)। আর এই ঝিলাম নদীর দেশ বলতে কাশ্মীরকে বুঝানো হয়েছে। বইটি ভারত শাসিত কাশ্মীর এর ভ্রমণের কাহিনি নিয়ে লিখিত।
- - -
দেশের বাইরে একা ভ্রমণে বের হওয়া বেশ কষ্টকর বিষয়। কথা বলার কেউ পাশে না থাকলে সব মধুই যেন অম্ল হয়ে যায়। দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণে বুলবুল সরওয়ার এতটাই একাকী ছিলেন যে, সেই অবস্থার প্রকাশ করেছেন প্রচণ্ডভাবে। আমার মনে হলো তার বক্তব্য আমাকেও স্পর্শ করছে। মনে হচ্ছিলো যে, ইস এখন কারো সাথে কথা বলতে পারতাম! এভাবেই লেখক পাঠককে নিয়ে গেছেন বইয়ের গভীরে।
- - -
কাশ্মীর ভ্রমণ শুরু হয়েছিলো একজন অপ্সরীর আতিথ্যের মাধ্যমে। আর শেষ হয়েছে সেই অপ্সরীকে স্বপ্ন দেখে। লেখক পাঠকের মনকে পরিপূর্ণতার দ্বারা স্নান করিয়েছেন।
লেখক প্রতিটি দর্শনীয় স্থান ভ্রমণের শুরুতে কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি উল্লেখ করেছেন । কবিতা, প্রকৃতি এবং ইতিহাস মিলেমিশে যেন একাকার।
- - -
প্রকৃতির বর্ণনার মাঝে রবী ঠাকুরের কবিতার পঙ্ক্তি:
"সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের স্রোতখানি বাঁকা
আঁধারে মলিন হল, যেন খাপে-ঢাকা
বাঁকা তলোয়ার।..."
যখন বইটি পড়ছি তখন কবিতা এবং প্রকৃতির মাঝে মনে হচ্ছিলো যেন, আমি নিজ চোখে দেখছি ঝিলাম নদী অবগাহন করছি ঝিলামের ঝরনায়।
আমি ছোটাছুটি করেছি ইতিহাসের পাতায়।
কান-পেতে শুনছি কাশ্মীরের মানুষের চেপে রাখা দুঃখ-কষ্ট-নিপীড়নের কথা।
তখন লেখক বাজিয়েছেন কবি আল-মাহমুদকে।
-
'মাঝে মাঝে হৃদয় যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে
ওঠে।
মনে হয় রক্তই সমাধান, বারুদই অন্তিম তৃপ্তি
আমি তখন স্বপ্নের ভেতর জেহাদ জেহাদ বলে জেগে উঠি।'
- আল মাহমুদ
আবার ফিরে আসি প্রকৃতির সমারোহে, আকাশের নিলীমায়। কখনো ভাবের দুনিয়ায়।
-
'এসো,
এক প্রেমিকের কবর জিয়ারতে এসো।
সমাধির নীরবতা অগ্রাহ্য করে এখানে বসন্ত
এসেছে;
আমার দেহের মৃত্তিকা হয়েছে নার্গিস,
তার বিস্ফারিত পাঁপড়িই আমার চোখ!
এসো-
এক প্রেমিকের কবরে মৃত্যুকে জয় করে এসো।'
-মীর তকী মীর
পুরো বইটিতে হাব্বা খাতুনের ইতিহাস হৃদয়ে ঝড় তুলে দিল। তাই হাব্বা খাতুনের কবিতার দু'একটি পঙ্ক্তি লেখকের অনুবাদে তুলে ধরলাম:
'পূর্ণ বিকশিত এক ইয়াসমিন ছিলো এ জীবন
তার জন্য সে হয়েছে কন্টকিত গোলাপের হাসি
এখন বিরহ কেন? বল্ সখী, বঁধুয়া ক্যামন?'
হাব্বা খাতুনের হৃদয় নিংড়ানো সুর:
'কৃষকের ঘরে জন্ম আমার হাব্বা খাতুন নাম-।'
আজো নাকি মানুষের মুখে মুখে এই গান:
'মুকুলিত হয়ে উঠেছে দূরের শ্যাম কানন/ তোমার কানে কি পৌঁছেনি তার আর্তনাদ...।'
প্রথমবার অনেক পরিশ্রম করে বইটির রিভিউ লিখেছিলাম। যখন লেখা ৯৮% শেষ হয়েছিল, ঠিক তখনই কপি করতে যেয়ে সম্পূর্ণ লেখাটিই হারিয়ে গিয়েছিল!! কী যে কষ্ট তখন হয়েছিল আমারো মনে হচ্ছিলো 'তোমার কানে পৌঁছেনি সে আর্তনাদ....'
সত্যিই বইটি যে পড়বে দীর্ঘদিন তার হৃদয়ে বইটির স্বাদ লেগে থাকবে। সাহিত্য বলতে তাই বুঝি যা হৃদয়ে রেখাপাত করে। কথার মাধ্যমে প্রiকাশ হয়। জীবন্ত হয়ে বারবার কল্পনার চোখে ধরা দেয়।
বইটি আমার পড়া সুন্দরতম এবং শ্রেষ্ঠতম একটি বই হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
সত্যিই এক সুখপাঠ্য বই।
বিষয়: বিবিধ
২৬৭০ বার পঠিত, ৬২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যিই বইটি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।
উপহারের জন্যেও অনেক ধন্যবাদ।
জাযাকিল্লাহ...
বইটির সম্ভবত পঞ্চাশতম সংস্করণ বের হতে পারে; কারণ অনেক পূর্বেই বইটির চল্লিশতম সংস্করণ বের হয়েছে।
লেখকের এটা সেরা বই। ধন্যবাদ আপনাকে।
বাঙলায় আপনার মন্তব্যটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
I'm waiting for your valuable comment in bangla...
Because your comment is heart touching JAJAKALLAH khair
ধন্যবাদ।
https://www.rokomari.com/book/24833/ঝিলাম-নদীর-দেশ---;jsessionid=F6476C28DBFA2B440EB76626D3CF981A
পঞ্চাশতম মুদ্রণ। সেখান থেকেও সংগ্রহ করতে পারেন।
স্থান পরিবর্তন করায় আমিও এখন ৮ নম্বরের নিয়মিত যাত্রী। কিন্তু আমরা কি কখনো একই সীটে বসেছিলাম? কি বিচিত্র দুনিয়া, এতো কাছে তবুও যেন কত দূরে।
লেখা এখনো পড়িনি, তাই লেখা সংক্রান্ত মন্তব্য পরে আসছে
হয়তো একসাথে কোনদিন এসেছি হয়তো বা অনেকদিনও হতে পারে।
পৃথিবী তো গোল!! আবারো দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।
ভাইয়া আপনার মোবাইল নাম্বারটা কি দেয়া যাবে!?
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
ধন্যবাদ মডু মামা/ মামীদেরকে পোস্টটি স্টিকি করার জন্যে।
আপনার মন্তব্যটি পড়ে এখন-ই বিপাশা'কে পড়ার এক চোরা-স্বপ্ন দেখছি।
ইরাবতী নামটি শুনেই বইটির মায়ায় পড়ে গেলাম।
আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে করা মন্তব্যটিকে স্বাগত জানাই।
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
বিশেষ করে মসজিদগুলোর বর্ণনার সময়। বিশেষ করে, ওরা যখন মসজিদগুলোর ওপর আক্রোশ করে মন্দিরে রূপান্তর করে!! কাশ্মীরের লোকেরা যখন বাঙলাদেশী কাউকে পায় তখন আবেগে কেঁদে ফেলে। ওরা স্বাধীনতাকে খুঁজছে!! ওরা ইন্ডিয়ান আর্মিকে ঘৃণা করে। একদিন কাশ্মীর-ফিলিস্তিনের বিজয় পতাকা ওড়বেই ইনশাআল্লাহ।
কিছু কিছু বই মানুষকে সম্মোহিত করে দেয়! এ বইটি তেমন।
আমার কোন বই একবার পড়ার পর দ্বিতীয়বার আর মন টানেনা; কিন্তু এ বইটি আবারো পড়তে মন চাচ্ছে।
রামের সুমতি বইটি আমার লিস্টে নিয়ে নিলাম। পড়বো ইনশাআল্লাহ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও।
কেমন আছেন সাইফুল ভাইয়া!?
সবাই কেমন আছেন!?
বইটি পাওয়ার স্থান জানাবেন। প্রচ্ছদের ছবি দিলে লিখাটি আরো সমৃদ্ধ হবে।
জাযাকাল্লাহ খাইর
এত ধন্য হলে পরে কিন্তু পকেট ছিনতাই করবো!!।
আসলে পোস্টটি দেয়ার সময় এ চিন্তা-ই আমি করেছিলাম; কিন্তু মোবাইল থেকে ছবি দেয়া যায় না। আর অফিস থেকে ছবি আপলোড করা নিষেধ। ঘড়ের পিসিটায় এখন নেট নেই। দেখি ইনশাআল্লাহ সময়-সুযোগ করে একসময় একটা ছবি দিয়ে দেব।
ধন্যবাদ সুচিন্তিত মতামত প্রদানের জন্য।
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
তবে হৃদয়ছোঁয়া মন্তব্যের জন্য আমি সাদিয়া মুকিম ছোট আপুকে বেশী নম্বর দিতে চাই আমার চেয়ে। আমার তো মনে হয় আমি যা বলতে চাই তা সময়াভাবে প্রকাশ করতে পারিনা। কিন্তু সাদিয়া অতুলনীয় এ ব্যাপারে।
সাদিয়া মুকিম, বানু আপা, কেউ কারও থেকে কম নয়।
আর আপনি-ই যখন এভাবে বলেন; তখন নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। এভাবে না বলি ৮নম্বরে মূলার মত ঝোলা ভাইয়াটা।
অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ।
তাইতো এই খুশীর আনন্দটুকু বিলিয়ে দিচ্ছি ব্লগের মাঝে। প্রথম বাংলা কমেন্ট করে। তোমার লিখাটি পড়ে মনে হচ্ছিল যেন বড় মাপের একজন স্বনামধন্য সাহিত্যিকের লিখা পড়ছি। উচ্চমার্গীয় ভালোবাসার অনুভূতি ও ভাববোধের সমাহারে সুসজ্জিত লিখাটি । ভালোলাগার সুবাস অনুভব করা যায় লিখাটির পরতে পরতে। ঝিলাম নদীর দেশ বইটি পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে শতাধিক।
দুই হাতে চাঁদের স্নিগ্ধছোঁয়া মনকেও রাঙিয়ে অভিভূত করে তোলে। লিখাটি পড়ে তোমার দেয়া মহামূল্যবান উপহার সামগ্রী বইগুলোর সান্নিধ্য আপ্লূত করলো আরেকবার।
কলমের ডগা থেকে মুক্ত ঝরুক । সতত। অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুধুই দোয়া করি। অবিরত। তুমিও তোমার দোয়ায় খাম্মুনিকে রাখিও কেমন? ভালো থেকো খুব ভালো।
খালামুনি আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য দুঃখিত। আমি তো জানতাম না সবাই এত অসুস্থ। তাহলে তো আর কষ্ট দিতাম না আপনাকে। সবার সুস্থতার জন্য দোয়া করি। এখন সবাই কেমন আছেন জানাবেন। খাম্মুনির হৃদয় থেকে নিঃসৃত কথাগুলো ভাবের জগতে ঢেউ তুললো। তবে আমার পরামর্শ, এমন অবস্থায় পরিবারকেই সময় দেয়া প্রয়োজন।
আমি প্রতিদিন শুধু ক্ষুদ্রতার কথা চিন্তা করছি। আমার সীমাবদ্ধতাগুলো আমাকে ভাবায়!! আমি চেষ্টারত আস্তে-আস্তে আমার সীমাবদ্ধতা থেকে বের হওয়ার জন্য।
দোয়া তো করতেই হবে খাম্মুনির জন্য
আমিও দোয়ার মুহতায্।
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়া আখিরাহ।
মটু মামা/ মামীদেরকে অনেক শুকরিয়া।
আপনার জন্যে দোয়া রইলো খাম্মুনি। জাযাকিল্লাহ।
্
বইটি উপস্থাপন করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
অবশ্য অনেক বই উপহার পেয়েছি ব্লগার আপু-ভাইয়াদের কাছ থেকে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
ঠিক ২য় পর্বের খোঁজ দেয়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
ভ্রমণ করুন খাইখাই করুন- কাজ পরে করা যাবে ক্ষণ
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
চাঁদ উপহার পেয়েছো তুমি আর বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছে চাঁদ তার টুকরা টুকরা চাঁদনী আলোর বিকিরণ ছড়িয়ে দিচ্ছে! মুগ্ধতার আবেশে সবটুকু গ্রহণ করে নিলাম ভাই। বইটিকে আমার পাঠাগারের নতুন অতিথি হিসেবে দ্রুত আমন্ত্রন পাঠিয়ে দিলাম দেশে!
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন। শুভকামনা ও শুকরিয়া রইলো।
আপনাকেও অনেক অ-নে-ক ধন্যবাদ আপু।
আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ততায় পূর্ণ হোক এই কামনা।
অনেক অ-নে-ক শুভকামনা।
আপনাদের অনুপ্রেরণা আমাদের পাথেয়।
জাযাকুমুল্লাহ খাইরান।
বইটিতে মোঘল ইতিহাসের কিঞ্চিৎ উপস্থাপন আছে।
আল্লাহু আকবার!!!
সময়মত পড়তে পারিনি! কিন্তু এখন দেখছি তাতে আমার ঠকা হয়নি! এত্তো এত্তো মন্তব্য যেন আপরূপা কন্যার গায়ে রত্নরাজির অলংকার!!
বইটা অ-নে-ক দিন আগে পড়েছিলাম, আপনার পোস্ট পড়া কিছু কিছু স্মরণ হলো!
জাযাকাল্লাহ
আপনাকেও দাদু ভাই একদল হাতুড়ির শ্রান্ত শুভেচ্ছা
বইটি সম্পর্কে আপনার মন্তব্যের জন্যে জাযাকাল্লাহ।
ইতিমধ্যে বইটির পঞ্চাশতম সংস্করণ বের হয়েছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টলে বইটি আপন যায়গা করে নিয়েছে। বইটি বাঙলা সাহিত্যের এক মাস্টার পিস। বারাকাল্লাহু ফীকুম দাদু ভাইয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন